গ্রামীনফোন (জিপি) দরে আপনার অগোচরে পকেট মারছে: সতর্ক থাকুন, নিজের পকেট সামলে রাখুন
আপনারা যারা মার্কেটিং আর সেলসে কাজ করেন না, তাঁরা হয়তো বিষয়টি জানেন না, তাঁদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলি। যখন সেলস খারাপ হয়ে যায়, তখন কোম্পানিকে অনেক কসরত করতে হয়। ডিলাররা চাহিদা দিক কি না দিক, তাঁদের কাছে গুচ্ছের মাল পাঠিয়ে ডেলিভারি খালাস দেখাতে হয়, বিভিন্ন প্যাকেজট্যাকেজ দিয়ে ডিলার কিংবা ক্রেতাদের কাছ থেকে আয় বাড়িয়ে নিতে হয়। যতক্ষন নূন্যতম সততা রক্ষা হয় ততক্ষন ঠিক আছে, নইলে বড্ড অসুবিধার ব্যাপার।সম্প্রতি গ্রামীন ফোন প্রতিদিন আমার পকেট থেকে যেভাবে প্রতিদিন দুইটাকা করে কেটে নিচ্ছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে, এরা এই ধান্দায়ই লেগেছে।তাহলে ঘটনাটা খুলে বলি।
প্রতিদিন মোবাইল ফোনে অসংখ্য জাংক এসএমএস আসে, সবগুলো খুলে দেখার প্রয়োজনও মনে করি না। এরকম একটি জাংক নম্বর থেকে প্রায়দিনই এই অফার সেই অফার দেয়া হয়, সেগুলো যেহেতু খুঁজে দেখি না, তাই বিষয়টি নিয়ে ভাবিও না।
গত শুক্রবার এক ইফতার মাহফিলে যাওয়ার জন্য ট্রাফিকজ্যামে বসে ফোনে ফেসবুকিং করছিলাম। এই সময়েই এসএমএস আসল। খুলে দেখি আমি কোন এক এডবক্স কুল ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেছি, সেই চার্জ হিসেবে প্রতিদিন আমার কাছ থেকে ২ টাকা সহ ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে রাখবে এরা!
এসএমএস আসার আগে আমি জীবনে সেই এডবক্স কুলক্লাবের নামও শুনিনি। তো অনলাইনে গিয়ে দেখলাম একটা সাদামাটা কী ওয়েবসাইট, আমাকে উল্টো প্রতিদিন টাকা দিলেও এই ক্র্যাপ সাইট আমি ব্রাউজ করব না, নিজে দুইটাকা খরচ করে করার তো প্রশ্নই উঠে না।
তো ঐদিন আমার দুইটাকা ওরা কেটে নিল। তারপরদিন আমি জিপির ফেসবুক পেজে এ নিয়ে অভিযোগ করলাম। আধাঘন্টার মাঝেই জিপির এক কর্মকর্তা আমাকে রিপ্লাই দিয়ে বললেন যে আমি চাইলে আরো ২ টাকা খরচ করে এই সার্ভিস থেকে নিজেকে বাদ দিতে পারি।
আরে আজিব! আমার কাছ থেকে তুমি জোর করে দুইটাকা কেটে নিবা এবং সেটা থেকে বাঁচতে হলে আমাকে আরো দুইটাকা দিতে হবে!
আমি তখন জানতে চাইলাম যে সার্ভিসটি জিপির নিজস্ব সার্ভিস কী না এবং কীভাবে আমি সেখানে যুক্ত হয়ে পড়লাম।
এইখানে কবি নীরব। প্রথম জবাবটা আমি আধাঘন্টায় পেলেও আসল প্রশ্নের জবাব আমি গত ৩ দিনেও পাইনি।
অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন যে এটা একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। আদতে কী তাই? আমি এই ফেসবুকেই দেখলাম আরো গ্রাহক অভিযোগ করছেন যে তাঁদেরকেও এভাবে জোর করে এডবক্স কুলক্লাবের সদস্য বানিয়ে ফেলছে জিপি। এখানে দেখুন।
এবার প্রশ্ন হবে আমি আমার প্রতিদিনের দুইটাকা খরচ নিয়ে হা হুতাশ করছি কেন?
আমি এবার আপনাকে পাটিগনিতটা দেখাই।
জিপির গ্রাহক সংখ্যা গত বছরের জানুয়ারির সরকারি হিসাব অনুযায়ীই ৪ কোটি ৭৬ লাখ। এদের সবার ফোনে যদি একবার তাদের এই ক্র্যাপ সার্ভিসটি জোর করে ঢুকিয়ে দিতে পারে, তাহলে এখানে আয় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। অনেকে হয়তো খেয়ালই করবে না ব্যাপারটা, অনেকে হয়তো একসপ্তাহ পরে খেয়াল করবে। ধরা যাক যদি ৫% গ্রাহকও একমাস খেয়াল না করে, তাহলে জিপি এখান থেকে কামাবে ১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৫০% গ্রাহক যদি প্রথম সপ্তাহেই আনসাবস্ক্রাইব করে, তাহলেও তাদেরকে আনসাবস্ক্রাইব ফি হিসেবে দিতে হবে ২ টাকা, এবং একসপ্তাহের জন্য ১৪ টাকা-এতে করে জিপির আয় হবে ৩৮ কোটি টাকা!
তাহলে দেখা যাচ্ছে এই ক্র্যাপ আপনার ফোনে অবৈধ প্রবেশ করাতে পারলে অপারেটরের কমপক্ষে বছরে ৬০/৭০ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
এখন বুঝলেন তো কেন আমি ২ টাকা নিয়ে আফসোস করছি?
নিজে সতর্ক থাকুন, অন্যকে সতর্ক করুন।
বিশেষ করে গভীর রাতে, সেহরির সময়, ইফতার কি তারাবির নামাজের সময় আসা মার্কেটিং এসএমএসগুলোকে ব্যস্ততার কারনে এড়িয়ে যাবেন না।
এদের কোন একটির ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে পারে বিষাক্ত ব্লেড-প্রতিদিন যা আপনার পকেট থেকে কষ্টের রোজগারগুলো কেটে নিতে থাকবে।
————————-
সংযুক্তি
————-
ব্লগটি প্রকাশিত হওয়ার পরে ফেসবুকে একজন সাবেক কনটেন্ট প্রোভাইডার স্টাফ নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে নিচের ভয়াবহ তথ্যটি দিলেন।
//মোবাইল কোম্পানীগুলো সাবস্ক্রিপশন ব্যাসিস ব্যাবসা করে। কোন সার্ভিসে কেউ সাবস্ক্রিপশন করলে প্রতিদিন ২/৩ টি মেসেজ পায়, প্রতি মেসেজে ২টাকা ৩০পয়সা কাটে – এ তথ্য সবাই জানে।
মোবাইল কোম্পানীগুলোর সাথে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানীগুলোও এই ব্যাবসা করে। এই কোম্পানীগুলোকে বলে CP(Content Provider)। এরকম একটা সিপি কোম্পানীতে আমি দেড় বছর প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত ছিলাম।
ইউজাররা সাধারণত একটি টেক্সট পাঠিয়ে সাবস্ক্রাইব হয়। এর পাশাপাশি, অফিসের হর্তাকর্তারা ইচ্ছেমত বিভিন্ন নাম্বারকে সাবস্ক্রাইব করায়, সেই সাথে তাঁর মিথ্যা একটা এন্ট্রি করে, যে সে সাবস্ক্রাইব করার জন্য এসএমএস পাঠিয়েছে।
১০ হাজার প্রকৃত সাবস্ক্রাইবার থাকলে ৭০/৮০ হাজার থাকে জোর করে সাবস্ক্রাইব করানো ইউজার। এটা একটা সার্ভিসের হিসাব। সাধারণত ১২/১৪টা সার্ভিস থাকে।
দেশে এরকম ১০/১২টা সিপি কোম্পানী আছে। আর তাদের এ প্রতারণা মোবাইল কোম্পানী গুলোও জানে।
arifjebtik.com ব্লগে লিখেছেন ব্লগার আরিফ জেবতিক
এবার দেখুন কিছু ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার মন্তব্য
sayeed বলেনঃ
এয়ারটেল থেকেও এই ফাইজলামি করে। মাস ছয়েক আগের কথা, মোবাইলের ব্যালেন্স হটাত করেই ২টাকা করে কমতেছে, আধ ঘণ্টার মাঝে তিন বার। কাস্টমার কেয়ারে কল দিলাম জানালো আমি নাকি কোন বালছাল সার্ভিস একটিভ করে রেখেছি। এমন একটা সার্ভিসের নাম বললো যা এই জন্মে শুনি নাই আর সাবস্ক্রাইব করার তো কথাই আসে না। এর ব্যাখ্যাও তারা দিলো, আমি যেহেতু টাচ স্ক্রিনের মোবাইল ব্যবহার করি নাই হয়তো কোন এক সময় ভুলে চাপ লেগে সার্ভিস একটিভ হয়ে গেছে
Moin Uddin Ahmed Tipu বলেনঃ
Mashiur Rahman বলেনঃ
গ্রামিনফোন নিজে থেকে আমাকে মোবাইল টিভির সাবস্ক্রিপশন দিয়েছিল কবে সেটা আমি দেখিই নাই । ফ্রি এক মাসের পর থেকে প্রতি সপ্তাহে তারা আমার একাউন্ট থেকে ৫৭ টাকা করে কেটে নিয়েছে প্রায় ৫ মাস । আমি টেরই পাই নাই । অবশেষে একদিন মোবাইল এ টাকা না থাকায় তারা আমাকে মেসেজ দিয়েছে রিচারজ করার জন্য । এদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে কেস করা উচিৎ কয়েকশ কোটি টাকার ।
ষাইফ ঋাষেল বলেনঃ
এক বছরে ৩৬৫ দিন, কিন্তু প্রতি মাসের প্যাকেজে আপনারা ২৮ দিন মেয়াদ পাবার কারনে সেটা গিয়ে দাঁড়াবে ১২x২৮=৩৩৬ দিন। আপনি হারিয়ে ফেললেন আপনার মূল্যবান ২৯ দিন। যা পেতে আপনাকে আরো একটা মাসের ইন্টারনেট বিল অতিরিক্ত দিতে হবে।
এর ফলে আপনি এক বছরে ১২ বার নয় ১৩ বার ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনছেন। অতিরিক্ত এই এক মাসের খরচ থেকে গ্রামীণফোন যে কোটি কোটি টাকা সরিয়ে নিচ্ছে সেই ভয়ংকর ব্যপারে আমরা কেউ জ্ঞাত তো নয়ই বরং যারা জ্ঞাত তারাও অনেকে চুপ করে আছেন।
ছোটবেলায় একবার ছিনতাই এর শিকার হয়েছিলাম, তখন তারা ছুরি পিস্তল নিয়ে আসছিলো। এখন দেখছি মানুষজন মোবাইল ব্যবহার করে ছিনতাই হচ্ছেন। এইটা ডিজিটাল যুগের দুর্দান্ত চমৎকার একটা উদাহরণ
কেশব চক্রবর্ত্তী বলেনঃ
টুটুল বলেনঃ
এই চুদির ভাই গ্রামীণফোন 2মাস আগে আমার বিলের সাথে আতিরিক্ত 987 টাকা যোগ করে বিল পাঠায় এর পর কেয়ারে গেলে তারা অনেক ঘাটাঘাটি করেও বলতে পারে না কেন বিল বেশি হল। 2 দিনপর জানালো কি এক সার্ভিস চালু করছি তার কারনে বিল বেশি হইছে। আমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে বাধ্য হলাম বিল শোধ করতে।
Monir Chowdhury বলেনঃ
আমি পোস্ট পেইড ইউসার, আমার মে মাসের বিলে ২২৪ টাকা অতিরিক্ত এজ ব্রাউসিং ও কন্টেন্ট বাবদ চার্জ করা হয়েছে অথচ আমার সাবস্ক্রাইব করা ১ জিবি শেষই হয় নাই | এ বেপারে বার বার তাগাদা দেয়া সত্তেও নিঃশ্চুপ | একই ধরনের ঘটনা আমার আরো ২-৩ বার হয়েছে |
শাহাদাৎ শাওন বলেনঃ
২ বছর পর কোন এক ফার্ম থেকে এক ব্যারিস্টার আমাকে নোটিশ পাঠায় তারা আমার কাছে ৪৫০০/- (এর বেশি হবে সঠিক মনে নেই) টাকা পায় এটা নোটিশ প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে নাদিলে ওরা মামলা করবে। আমি জিইসি মোড় কাস্টমার কেয়ারে গেলে ওরা বলে অন্তত অর্ধেক টাকা দেন তাহলে দেখি আমরা কি করতে পারি।
আমি তখন তাদের বলি পারলে তোরা আমার বাল চিড়িস। এটা বলে চলে আসি। তারপর এই ঘটনার আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
পুনশ্চঃ সেই সময় শুনেছি লক্ষাধিক এধরনের নোটিশ দেয়া হয়েছিল মামলার ভয়ে প্রায় সবাই এই টাকা পরিশোধ করেছে।
সুমন বলেনঃ
আমি একদা একটি মোবাইল কোম্পানিতে চাকুরীরত ছিলাম। সেখানে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর থেকে একজন কর্মকর্তা এসে একটি সেমিনার করে সব বলে দিয়েছেন। তিনি আশা করেছেন, মোবাইল ব্যবহারকারীরা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আরো সচেতন হবেন আর মোবাইল কোম্পানিগুলোর জন্য জরিমানার অংকও বেশী।
এই লিংকটি দেখুনঃ http://dncrp.gov.bd/contactform.php
Zakir বলেনঃ
বলা নাই, কওয়া নাই জিপি আমার মোবাইলে ইন্টারনেট সেটিং পাঠাবে বলে মেসেজ পাঠালো। পরের মিনিটেই পাঠিয়ে দিলো। পরের মিনিটেই আর একটা পাঠিয়ে বলল যে আমার অনুরোধকৃত প্যাকেজটা এখন পাওয়া যাবে না। বেশ ধন্দের মধ্যে পরে গেলাম। যেহেতু এই সিমটাতে তেমন টাকা ভরি না, তাই তেমন চিন্তা করলাম না। সন্ধ্যার পরে শুনলাম, বউ জিপির কাস্টমার কেয়ারের সাথে কা কা করতেছে। শেষ পর্যন্ত যতটুকু উদ্ধার করা গেলো তা হলো তার পোস্টপেইড নাম্বারের মান্হলি ইনটারনেট প্যাকেজটি দুইবার কেনা হয়েছে। দ্বিতীয়বার অটো রিনউয়াল। আপটুডেট স্টেটমেন্ট চাওয়া হলো। কয়েকদিন পরে পাওয়া যাবে। কারন সিস্টম আপগ্রেডেশন। কিন্তু আমার মাথায় আলোর ঝলকানি। তাহলে তো এরকম অটো রিনিউয়াল করিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিলো জিপি! ভাগ্যিস আমার ফোনের সিমটাতে কেটে নেয়ার মত পর্যাপ্ত ব্যালান্স ছিলো না। যদি আপনি জিপির একটি রেজিস্টিকৃত সিমের ব্যাবহারকারী হন, আজই আপনার আপটুডেট স্টেটমেন্ট চান। যদি ইমেইল করেন, দয়া করে বিটিআরসি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং কনজুমারস এসোসিয়েশন (CAB) কে কপি দিন। বলা যায় না, একই মাসে একটি প্যাকেজ দুইবার কিনে নেয়ার টাকা ফেরত পেলেও পেতে পারেন।
এছাড়া মাঝেমধ্যেই ইচ্ছে কৃত নেটওয়ার্ক সমস্যাও তৈরি করে। যাতে কল কেটে আবার কল দেয়া, কাস্টমার কেয়ারে লাইন ধরে মিনিট দরে টাকা দেয়া সহ অনেক মাধ্যমেই আয় ভালোই হচ্ছে।
মাঝখানে একদিন সিম্পনি মোবাইল এ গ্রামীণ সিম প্রবেশ করানোর ৩০ মিনিটের মাথায় ৪/৫ টা অফার চালু হয়েছিলো। গ্রামীণফোন কে জিজ্ঞেস করলে জানালো আমি নাকি মেসেজ পাঠিয়ে এগুলো চালু করেছি। তাদের চ্যালেঞ্জ করার পর শিকার করে এটা সিম্পনির সাথে তাদের একটা চুক্তি। সিম্পনি মোবাইল এ গ্রামীণ সিম ব্যবহার করলেই এটা অটো চালু হবে…
বাংলাদেশে বাস করি। তাই এর সমাধান চাওয়ার মতো কোন কোম্পানি নেই যে এসকল স্প্যাম এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। এমনকি BTRC ও নিরব।